top of page
Writer's picturesschoolbd

কানাডার দিনলিপি-২


- ১৪ এপ্রিল ২০২১, ভ্যানকুভার, কানাডা -


হাড্ডি গুলো কেমন যেন মচমচে ঠেকে। শীতে কানাডায় সুর্যের দেখা মেলা ভার। আলাদা করে ভিটামিন ডি খাইনি এই সিজনে। এপ্রিলে কানাডায় বসন্ত চলে। একটু রোদ উঠে। নিয়ম করে গায়ে রোদ লাগাই ডির জন্য। বোতল ভরে সুর্যের আলোগুলি যদি দেশ থেকে আনতে পারতাম! কোকের মত সেটা ঢক ঢক করে গিলতে পারতাম!


দক্ষিন কোরিয়াতে থাকতেও ওমন হত। ৬ মাস সুর্যের সাথে আড়ি। রাস্তাঘাটে কোরিয়ানদের ক্রাচ আর প্লাস্টার পায়ে দৃশ্যে মনে হত আন্দোলনে পুলিশের বাড়ি খেয়ে পা ভাংছে! আবহাওয়ার জন্য ওদের বেশিরভাগই ডির অভাব। মটমট করে হাড্ডি ভাংগায় তাদের জুড়ি মেলা ভার।


গরমে দেশে কখনো ঘুরতে আসলে ইচ্ছা করেই রোদ গায়ে লাগাতাম খুব। দুপুর ৩ টায় খা খা রোদে হেটে এসে বলতাম - আহা কি মিস্টি রোদ! আম্মু, খালামনি, কাজিনরা তা নিয়ে হাসাহাসি করত। ওরা কি বুঝবে রোদের অভাব!


মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। মুড একাডেমিক অবস্থার উপর প্রচন্ড নির্ভরশীল। প্রফেসরের সাথে সকালের রিসার্চ মিটিং ভালো গেছে। খুশিতে দুপুরে লনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম। স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসের সাথে তরল সোনালি রোদ গুলে যেন গায়ে লাগছে। ফ্লানেলের ড্রেস বাতাস রুখে দিচ্ছে আর তরল রোদ চুইয়ে চুইয়ে ভেতরে ঢুকছে! কি আরাম!


হাতে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংকলন। উমার "খাতা"য় ডুবেছিলাম। উমা শশুর বাড়ী যাবে যাবে, হঠাত ঠকঠক শব্দে চেয়ে দেখি কয়েকটা চড়ুই পাইন গাছটায় টাংগানো বার্ড ফীডারের ছোট্ট ছিদ্রে ঠোকর দিচ্ছে। ভেতরে খাবার। নানান কিসিমের বীজ দেয়া- কুমড়ো, তরমুজের বীজ, বাদাম। এগুলা সব বাড়ীওয়ালির কাজ। ফিডার প্রায় তলাতে লেগে আছে। তাও ঠোকরাচ্ছে। বোকা পাখি।


পাশেই আরেকটা ফিডারে নাম না জানা কি একটা পাখি 'সুয়েট' চর্বি খুটে খুটে খাচ্ছে। কানাডার শীতে পাখিদের অনেক কস্ট হয়। গা গরম রাখার জন্য পাখিদের চর্বি খেতে হয়! সুয়েট নাকি গরু, ভেড়ার আরো কি কি হাবিজাবির চর্বি দিয়ে বানানো। পাখিদের শীতকালে বিল্ট-ইন হিটার হিসেবে পুস্টিকর চর্বির ব্যবস্থা আরকি! আরেকবার বাড়িওয়ালিকে সুয়েটে পিনাট বাটার মাখায়ে দিতে দেখেছিলাম! কি ছিল ওইটা? পাখিদের ডেজার্ট?! কি সমাদার বাহ!


বাড়ীওয়ালিকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তোমরা কানাডিয়ানরা কাঠের বাড়ী বানাও কেন, ইট সিমেন্ট কি দোষ করছে? রড সিমেন্টের চাইতে কাঠ নাকি বেশি এভেইলেবল। আসলেই। ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে যে লম্বা লম্বা গাছ! বাসার সামনের লনেই চল্লিশফুটি তিনটা পাইন গাছ সাই দাড়ায়ে আছে। যেন নীরবে বাড়ী পাহারা দিচ্ছে তিন দত্য। পাইনের ত্রিকোনা ফল গুলো লনে পড়ে থাকে। কাঠবেড়ালি গুলো এসে খুটে খুটে কি কি যেন খায়। কাছে গেলেই দৌড় দিয়ে গাছে ঊঠে পড়ে।


গালের একপাশটা রোদে মৃদু গরম হয়ে ঊঠেছে। মনে হচ্ছে নরম পাউরুটি তাওয়ায় ছেকে গালে চেপে ধরেছে। ভালোই লাগছে। গাল ডলতে ডলতে ফের ডুবে গেলাম রবীন্দ্রনাথে।


লেখক:

প্রতিষ্ঠাতা, Scholarship School BD

পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যানকুভার, কানাডা

 

দয়া করে অনুমতিহীনভাবে লিখা কপি করবেন না। ধন্যবাদ।

45 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page