- ৯ এপ্রিল, ২০২১, ভ্যানকুভার, কানাডা -
বাইরে ঝক ঝকে রোদেলা দিন দেখে জানালার ব্লাইন্ড সরিয়ে দিলাম। ঘর উজালা করে হুড়মুড় করে একগাদা রোদ আসলো। অনাহুত মেহমানের মত যাই যাই করেও যাবার নাম নেই শীতের। শীতেলা রোদের বসন্তের এই সময়টার জন্য কানাডাতে সবাই অধীর আগ্রহে থাকে।
প্রায় সপ্তাহ খানেক ঘরের বাইরে যাইনি। এই সপ্তাহে ইস্টারের জন্য লং উইকেন্ড ছিল। এরা এখানে ইস্টারে শনি রবি সোম টানা ৩ দিন ছুটি দেয়।
জানালার ব্লাইন্ড সরিয়ে ইংলিশ বের উপকুলের পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়ে ঝিম মেরে ভাবছিলাম- অলস হয়ে গেছি। পড়াশুনা আকাশে উঠেছে। একটা এক্সপেরিমেন্টে আটকে গেছি গত সপ্তাহ, মিলছেই না। প্রফেসর এই সপ্তাহের গ্রুপ মিটিংও ক্যান্সেল করেছে তার কিসের কি জানি প্রপোজাল ডেডলাইন আছে। এনাদের লাইফের পুরোটাই ডেডলাইন দিয়ে ভরা। কিভাবে এত স্ট্রেস নেয়।
টাং করে মৃদু আওয়াজে ভাবনাচ্ছেদ হলো। ম্যাথিউ মেসেজ দিয়েছে স্ল্যাকে। স্ল্যাকের নোটিফিকেশন আওয়াজটা কেন জানি শুনতে ভালো লাগে। খুব সফট। মনে হয় যেন বালিশের তলে মোবাইল রেখে দিয়ে বেলের আওয়াজ দিচ্ছে।
ল্যাবে আসতে বলতেছে ম্যাথিউ কিছুক্ষন পর। ও গ্রুপের পোস্ট ডক। আমার পিএইচডির প্রজেক্টের কিছু কাজে ওর হেল্প লাগতেছে।
বাসা থেকে বের হলেই বাস স্টপ। ভ্যানকুভারের পাব্লিক বাসগুলো সব ইলেক্ট্রিক- ধোয়া বের হয়না। গ্রিন সিটি আর কি। এখন কোভিড-১৯ এর জন্য ১৪ নাম্বার বাসগুলোর সংখ্যা কমে গেছে। আগে ১০ মিনিট পর পর বাসার সাম্নের বাস স্টপ থেকে বাস পেতাম, এখন ৩০/৪০ মিনিট পর পর আসে।
ওয়েট না করে, ১০ মিনিট হেটে ৯৯ নাম্বার বাস স্টপে গেলাম। ৯৯ সংখ্যার মত এই বাসগুলোও ভ্যানকুভারের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং বড়। দুটা ক্যারিয়ার একসাথে জোড়া লাগানো। নরম্যাল দিন গুলোতে ৯৯ বাসে প্রচুর ভিড় থাকে। এখন কোভিড-১৯ এর জন্য প্রায়ই ফাকা।
বাসে দেখলাম এক ছেলে উঠলো। লাল টুকটুকে হুডি গায়ে। সাথে আবার লাল ক্যানভাসের জুতা। দেখে বেশ হাসি পেল, যদি এটা ঢাকা হতো! ওদের কিন্ত লাল রঙ বেশ লাগে।
ভার্সিটিতে যেতে ১০ মিনিট লাগে বাসে। চশমা টিশার্টের গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি। মাস্ক পড়লেই গ্লাস ঘোলা হয়ে যায়, একটা বিরক্তি অবস্থা।
ক্যাম্পাসে সব ক্লাস অফ। কিছু পিএইচডি স্টূডেন্টদের রিসার্চের জন্য ক্যাম্পাসে আসার অনুমতি মিলেছে শুধু। সেই দলে আমিও আছি। দু একটা মেয়ে স্টূডেন্ট দেখলাম নানা ভংগিতে চেরি ব্লোজম গাছগুলির সামনে ছবি তুলছে। আমিও বাদ কেন যাবো, তাই আমিও তুললাম। আমরা কয়েকজন ছাড়া পুরো ক্যাম্পাস ধু ধু করছে।
একটা সাদা কালারের স্পোর্টস কার দেখলাম পার্কিং লটে। সিটে চাইনিজ এক ছেলে। বয়সে মনে হলো আন্ডারগ্র্যাড। এখানকার চাইনিজ গুলো খুব ধনী। কানাডার ভার্সিটিগুলোর কাছে এরা ক্যাশ-কাউ, দুধেল গাইয়ের মত আর কি। মোটা অংকের টুইশন ফি দেয়া এদের কাছে ডাল ভাত।
ল্যাবে ঘন্টা দুয়েক এক্সপেরিমেন্ট করলাম। মাথা থেকে জং লাগা ভাবনার প্যাচ কিছুটা ছাড়লো। ল্যাবে থাকলে মনে হয় বাসায় না যাই, আর বাসায় থাকলে মনে হয় বাইরে না যাই। কি একটা অবস্থা।
কবে যে শুনতে পাব একদিন কোভিড-১৯ আর নাই, আর মাস্ক পড়া লাগবে না, আর হ্যান্ড শেক করতে বাধা নাই। আগে ক্লাস, রিসার্চ করতে করতে ভাবতাম সারাদিন বাসায় একটু রিলাক্স করতে পারলে ভাল লাগতো, আর এখন মনে হয় আগেই ভালো ছিল। মানুষ মানেই বিচিত্র।
লেখক:
প্রতিষ্ঠাতা, Scholarship School BD
পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যানকুভার, কানাডা
দয়া করে অনুমতিহীনভাবে লিখা কপি করবেন না। ধন্যবাদ।
😊👍
Thanks for share with us🥰