কোভিড ১৯ এর জন্য দেশের বাইরে সব আন্তর্জাতিক কনফারেন্স গুলি এখন ভার্চুয়াল মোডে চলে গেছে, তাই বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য আন্তর্জাতিক কনফারেন্স রিসার্চ পেপার পাবলিকেশন করার জন্য একটা ভালো সুযোগ বলা যায়। আগের মত ভিসার খরচ, হোটেল ও ট্রাভেলিং এক্সপেন্স নিয়ে ভাবা লাগবে না তোমাদের। তোমরা যারা আন্ডারগ্রাজুয়েটে থিসিস করছো বা শেষ করে ফেলেছো এবং পাবলিকেশন নিয়ে ভাবছো, তারা এই বিষয়টা মাথায় রেখে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক পাবলিকেশন এর হাতে খড়ি করে ফেলতে পারো এই সুযোগে। পেপার একসেপ্ট হলে এখন ঘরে বসেই অনলাইনে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সগুলোয় প্রেজেন্টেশন দিতে পারবে। শুধু তাই না ভার্চুয়াল মোডে কনফারেন্স রেজিস্ট্রেশন ফি এখন বেশ কমে গেছে আগের তুলনায়।
তবে প্রিডেটরি বোগাস কনফারেন্সগুলি কিন্ত এই সুযোগে আরো ব্যবসা করে ফেলবে - ভালো এমাউন্টের একটা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে, তাই তাদের থেকে তোমরা সাবধানে থাকবে। আমাদের দেশের আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট গুলো সবচেয়ে বেশি শিকার হয় ইন্ডিয়ার প্রিডেটোরি কনফারেন্সগুলোর। আমাদের দেশের অধিকাংশ আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট গুলো বুঝতে পারেনা যে ইন্ডিয়ার কনফারেন্সগুলো (এবং জার্নালও বটে) যেগুলোতে তারা পেপার এক্সেপটেন্স নোটিফিকেশন পেয়ে খুশি হচ্ছে, তারা বুঝতে পারে না যে ওগুলো প্রিডিটোরি বোগাস কনফারেন্স।
কনফারেন্স দু ধরণের হয়। ইন্টারন্যাশনাল ও ডোমেস্টিক। ডমেস্টিক কনফারেন্স কি?
আর বিভিন্ন লোকাল ইউনিভার্সিটি গুলা ডোমেস্টিক কনফারেন্সগুলার আয়োজন করে থাকে, যেগুলার মান ও কোয়ালিটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স থেকে বেশ পিছিয়ে। যেখানে এডমিশনের সময় সারা বিশ্বের ক্যান্ডিডেটদের সাথে ফান্ডিং এর লড়াইয়ে তোমাকে নামতে হবে সেখানে ডোমেস্টিক কনফারেন্স এর পাবলিকেশন তোমার সিভিতে খুব একটা ভ্যালু এড করবে না কিন্ত এটাও সত্য যে কিছু না থাকার চেয়ে ডমেস্টিক একটা কনফারেন্স থাকা ভালো। কিন্ত যদি পারো তবে নিজের পেপারের স্ট্যান্ডার্ড একটু কষ্ট করে হলেও বাড়িয়ে, বরং ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেই পাব্লিশের চেষ্টা কর এই কোভিড ১৯ এর টাইমে ভারচুয়াল মোডের সুবর্ন সুযোগে। এতে তোমার ভিসা, প্লেন ভাড়া, ট্রাভেলিং খরচ এসব নিয়ে ভাবা লাগবে না! আন্তর্জাতিক কনফারেন্স গুলো কারা আয়োজন বা স্পন্সর করে?
তোমার সাবজেক্ট যাই হোক, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইকোনোমিক্স, CSE, EEE, মেকানিক্যাল, সিভিল ইত্যাদি প্রতিটা সাবজেক্টের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি আছে। এই সোসাইটি গুলো গড়ে উঠে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভার্সিটির একই টপিক বা রিসার্চ ফিল্ড নিয়ে গবেষণারাত প্রফেসরদের নিয়ে, একটা টাইট-নিট রিসার্চ কমিউনিটি যেখানে সকল প্রফেসর তার অন্য সহকর্মি প্রফেসরদের চেনেন কম বেশি। যেমন ধরো IEEE তে যারা ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক্স- মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে রিসার্চ করে তাদের জন্য Antenna and Propagation Society, ও Microwave Theory and Technique Society আছে। এধরনের সোসাইটিগুলির প্রফেসরগনই বার্ষিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স গুলোর আয়োজন করে থাকে। যেমন কিনা Microwave Theory and Technique Society প্রতিবছর IMS নামে ফ্ল্যাগশিপ কনফারেন্স আয়োজন করে, আবার Antenna and Propagation Society আয়োজন করে এন্টেনার ফ্ল্যাগশিপ কনফারেন্স APS/URSI. এমন ভাবে সিভিল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটিং ফিল্ডেরও আলাদা আলাদা সোসাইটি আছে যারা নিজ নিজ ফিল্ডের ভালো ভালো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করে। কিভাবেই বা প্রিডেটরি বোগাস ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সগুলি চিহ্নিত করবে?
আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করার জন্য Technical Program Committee (TPC) সহ আয়োজক কমিটি (organizing committee) থাকে যাদের মধ্যে প্রফেসর কিংবা ইন্ড্রাস্ট্রির R&D তে কাজ করছে এমন সায়েন্টিস্টগন থাকেন। এদের কাজ জমাকৃত সমস্ত পেপার রিভিঊ করে এক্সেপ্ট বা রিজেক্ট ডিসিশন দেয়া শুরু করে, কনফারেন্স আয়োজনের যাবতিয় খুটিনাটি দেখভাল করা।
একারনে একটা কনফারেন্স আদৌ রিলায়েবল নাকি বোগাস সেটা বোঝার উপায় হলো ওই কনফারেন্স এর ওয়েবসাইটে গিয়ে organizing committee, Technical program committee, invited speaker etc. committee তে থাকা লোকজনদের প্রোফাইল দেখা যে আদৌ তাদের এফিলিয়েশন কোন ভালো ইউনিভার্সিটির কিনা বা তারা আদৌ ভাল কোন ভার্সিটির প্রফেসর কিনা।
অনেক বোগাস প্রিডেটরি কনফারেন্স তাদের কমিটিতে/ইনভাইটেড স্পিকার সেকশনে অনেক প্রফেসরদের নাম এফিলিয়েশন এড করে দেয় তাদের অজান্তেই। অতএব সন্দেহ হলেই, ওই প্রফেসরকে ইমেল করে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করতে পারো তিনি সত্যি সত্যি অর্গানাইজিং কমিটিতে বা স্পিকার হিসেবে আছেন নাকি। আর হ্যা, ইমেলটা যেন প্রফেসরের নিজের ইউনিভার্সিটির ইমেইল হয়, ইয়াহু, জিমেইল হলে সন্দেহ বেশি করবে,আরো। কনফারেন্স পেপার পাবলিশিং এর ধাপগুলো কি কি?
কনফারেন্সের ওয়েব সাইট থেকে call for paper (CFP) দেখতে হয় প্রথমে। পেপার এবস্ট্র্যাক্ট জমা দেবার লাস্ট ডেট, পেপার কয় পেজের কি কি টপিক নিয়ে কনফারেন্স ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াদি CFP তে লেখা থাকে। এরপরে, কনফারেন্সের ওয়েব সাইট থেকে নির্ধারিত পেপার টেমপ্লেট ফাইল অনুযায়ী নিজের রিসার্চ পেপারটা সাজিয়ে নিবে। তারপর অনলাইন সাবমিশন পোর্টাল এ নির্দিষ্ট তারিখের আগেই সাবমিট করে দেবে। এরপর নির্দিষ্ট সময় পর তোমাকে হয় এক্সেপ্টেন্স বা রিজেকশন নোটিফিকেশন ইমেইল দেয়া হবে (একেক কনফারেন্স একেক টাইম, বাট সাধারণত দেড় দু মাস বা ততোধিক এভারেজ ধরে রাখো ভালো কনফারেন্স গুলোর জন্য)। একসেপ্ট হয়ে গেলে রিভিউয়ারদের সাজেশন অনুযায়ী মোডিফাই করে পেপারটি ফাইনাল করে নির্দিষ্ট টাইমের মধ্যে আবার সাবমিট করতে হয় যাকে Camera ready manuscript বলে। এরপর নির্দিষ্ট টাইমের মাঝে তোমাকে পেপারটি প্রেজেন্টেশন এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। উপরে একবার বলেছি যে covid-19 এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি এখন ভার্চুয়াল কনফারেন্সগুলোতে বেশ কমেছে আগের তুলনায়, হোটেল ফি, ভেনু ফি ইত্যাদি না থাকায়। এতে তোমার অনেক টাকা বেঁচে যাবে আবার একটা এই সুযোগে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স পাবলিকেশনও হয়ে যেতে পারে। নির্ধারিত দিনে তোমাকে এরপর কনফারেন্স পেপার প্রেজেন্ট করতে হবে। এখন covid-19 এর জন্য কনফারেন্সগুলো এক্সেপ্টেড পেপারগুলোর প্রেজেন্টেশন (সাধাৰনত ১৫-২০ মিনিট হয়) স্ক্রিন রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে অনলাইনে কনফারেন্সের পোর্টালে সাবমিট করার জন্য বলে।আমি গত মাসে অর্থাৎ জুলাইতে ঘরে বসে একটা পেপার আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এ প্রেজেন্ট করি। covid-19 এর জন্য ভার্চুয়াল মোডে অনুষ্ঠিত হয় কনফারেন্সটি। প্রেজেন্টেশনটি আগেই আমাকে স্ক্রিন রেকর্ড দিয়ে রেকর্ড করে নির্দিষ্ট দিনের মাঝে কনফারেন্স পোর্টালে জমা দিতে হয়েছিল।
সাবজেক্ট ওয়াইজ সোসাইটি লিস্ট যেখান থেকে রিলায়েবল আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের খোঁজ পাবে
কিছু সাব্জেক্টের আন্তর্জাতিক সোসাইটির নাম আমি নিচে দিয়ে দিচ্ছি যাতে তুমি এসব ওয়েব সাইট থেকে নিজ নিজ ফিল্ডের ভালো কনফারেন্সগুলো বের করে নিতে পার।
Engineering:
*Civil engineering : ASCE, https://www.asce.org
*Mechanical: ASME, https://www.asme.org
*CSE: ACM, https://www.acm.org
*EEE: IEEE, https://www.ieee.org | IET, www.theiet.org
*Material Engg: ASM, www.asminternational.org
*Chemical Engg: AIChE, www.aiche.org
CSChE, www.cheminst.ca
*Industrial Engg: IISE, www.iise.org
*Aeronautics Engg: AIAA, www.aiaa.org
*Agriculture Engg: ASABE https://www.asabe.org/
Science:
*Physics: APS, www.aps.org | AIP, www.aip.org
*Mathematics: AMS, wws.ams.org | MAA, www.maa.org
*Chemistry: ACS, www.acs.org
*Microbiology: ASM, www.asm.org
*Biochemistry: AACC, www.aacc.org | ASBMB, www.asbmb.org
*Biology: AIBS, www.aibs.org
*Botany: BSA, www.cms.botany.org/home.html
*Statistics: ASA, www.amstat.org
*Geography: AGS, www.americangeo.org
*Environment science: ESA, www.esa.org
Arts:
*English Literature & related: ASLE, www.asle.org | ACLA www.acla.org| MLA www.mla.org
*Development Studies: DSA, www.devstud.org.uk
*Antropology & Archaeology:
CAS, www.cas-sca.ca | SAA, www.saa.org
*Law: https://www.asil.org/
Business:
*Finance: AFA, www.afajof.org
*Management & Operational Research Science: INFORMS, https://www.informs.org/
EurAM, https://euram.academy/
*Economics: AEA, www.aeaweb.org
CEA, www.economics.ca
অনেক ঘাটাঘাটি করে রেডি করেছি লিখাটা, লেখাটি কপি করার সময় দয়া করে 'কালেক্টেড' না লিখে, ক্রেডিট সহ উল্লেখ করুন: Md Nazmul Hasan, Founder, Scholarship School BD University of British Columbia, Vancouver, Canada
Comments